অটিজম : আমাদের যা যা জানা উচিৎ – Autism : What we should know?

Hasan Ebna Amin

Updated on:

অটিজম : আমাদের যা যা জানা উচিৎ – Autism : What we should know?

অটিজম (Autism) হচ্ছে একটি স্নায়বিক ও বুদ্ধি বিকাশগত সমস্যা।

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে প্রতি ৬৮ জন শিশুর মাঝ ১ জন বাচ্চা অটিজম (Autism) আক্রান্ত। অন্য দিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ (USA)- এর তথ্য অনুযায়ী তিন বছর থেকে দশ বছর বয়সি প্রতি এক হাজার জন শিশুর মাঝে ৩ জনের অটিজম (Autism) সমস্যা দেখা যায়।

অটিজমের কারণ- Causes of autism

কী কারণে অটিজম (Causes of autism) হয় তা এখনও সুনির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত যে, পরিবেশ দূষণ, খাদ্যে ভেজাল (টক্সিক বা বিষাক্ত মেটাল, কীটনাশক, বিষাক্ত প্রিজারভেটিভ ইত্যাদি মেশানো খাবার), শিশুদের টিকা-র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পরিবার বা বংশে অটিজমের ইতিহাস ইত্যাদি অটিজম (Autism) হওয়ার পেছনে ভূমিকা পালন করে।

ভাল থাকুন ডট কম  (ValoThakun.Com) এর আজকের লেখা  অটিজম : আমাদের যা যা জানা উচিৎ – Autism : What we should know? নিয়ে

বাংলাদেশে অটিজম (Autism) এর সমস্যা

বাংলাদেশে অটিজম (Autism) সমস্যার ছবিটাও ভয়াবহ। তবে এখানে একটি বড় সমস্যা হল অধিকাংশ ক্ষেত্রে অটিজম (Autism) রোগটি ঠিকমতো ধরা পড়ে না। এর প্রধান কারণ হল সচেতনতার অভাব। ‘বাচ্চা বড্ড স্লো’, সাধারণ এই সমস্যা রয়েছে ভেবে অধিকাংশ বাবা-মায়েরা শিশুকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। এবং পরবর্তী কালে শিশুটির ওই স্লো হওয়ার জন্য চিকিৎসাই চলতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অটিজম (Autism) এর সমস্যা।

অন্য দিকে স্কুলেও অটিজম (Autism) আক্রান্ত বাচ্চার প্রতি আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চার মতোই আচরণ করা হয়। তাদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই নগন্য।

কখন আপনি বুঝবেন আপনার বাচ্চার বিকাশ গত সমস্যা বা অটিজম (Autism) থাকতে পারে?

সাধারনত বাব-মা বা পরিবারের সদস্যরা ১৮ মাস বয়স থেকে ২ বছর বয়সের মধ্যে শিশুর আচরণে অস্বাভাবিকতা বা অন্য শিশুদের চেয়ে ভিন্ন বলে বুঝতে পারেন। সাধারনত এই রোগে আক্রান্ত শিশু এবং একই বয়সের অন্য বাচ্চাদের খেলার আগ্রহে ভিন্নতা দেখা যায়। তাদের সামাজিক মেলামেশায় যেমন- কথা বলা বা ভাব প্রকাশে অনীহা দেখা যায়।

কিছু কিছু বাচ্চা আবার দুই বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকে। খেলাধূলা, কথা বলা, সব ঠিক থাকে ১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত। কিন্তু এরপর হঠাৎ করে কথা বলা ও সামাজিক মেলামেশা কমিয়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয়। এটা হল রিগ্রেসিভ অটিজম (Autism)

ValoThakun.Com –ভাল থাকুন ডট কম   এর আজকের ব্লগ পোস্ট  অটিজম : আমাদের যা যা জানা উচিৎ – Autism : What we should know? বিষয়ে 

নীচের বিষয়গুলোর বয়স অনুযায়ী ঠিক ভাবে না হলে অবশ্যই আপনাকে সতর্ক হতে হবে –

  •  শিশুর ১২ (বারো) মাস বয়সের মাঝে মুখ দিয়ে বিভিন্ন শব্দ যেমন বা বা, বু বু, মা মা ইত্যাদি শব্দ করা;
  •  শিশুর ১২ (বারো) মাস বয়সের মাঝে নিজ হাত দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে নির্দেশ করা, টাটা করা ইত্যাদি;
  •  শিশুর ১৬ (ষোলো) মাস বয়সের মাঝ অন্তত একটি করে অর্থবোধক শব্দ বলা;
  •  শিশুর ২৪ (চব্বিশ) মাস বয়সের মাঝে অন্তত দু’টি অর্থবোধক শব্দ একসাথে বলা;
  •  এ ছাড়া যে কোনও বয়সে যদি কোন শিশু কথা বলা বা সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দিয়ে থাকে,

যদি কোনো শিশু নির্দিষ্ট কোন শারীরিক মুভমেন্ট বারবার করে অথবা অন্যের চোখে চোখ রেখে নিজের ভাব বিনিময় না করে, তা হলে সাথে সাথে শিশুকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

 

যদি শিশুর মাঝে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেনতাহলে করনীয়-

যদি শিশুর বয়স ১৮ মাস থেকে ৩ বছরের মাঝে হয়, তা হলে তার এ অস্বাভাবিকতার কারণ হিসেবে প্রথমে অটিজম (Autism) ই মাথায় আনতে হবে। এটি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন অ্যাসেসমেন্ট টুল চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন। অটিজম হওয়ার সম্ভাব্যতা যদি থাকে সেই অনুযায়ী শিশুর জন্য প্রথমেই ইন্টারভেনসন প্রোগ্রাম ডেভেলপ করতে হয়, যাতে তার অটিস্টিক আচরণ প্রকাশ পেতে না পারে এবং তার স্নায়বিক বিকাশ সঠিক ভাবে হয়।

যদি বাচ্চার বয়স ৩ বছরের বেশি হয়, তা হলে তার অটিজম নিরুপণ ও মাত্রা নির্ধারনের জন্য আলাদা রকমের অ্যাসেসমেন্ট টুল বা চার্ট ব্যবহার করা হয় এবং অটিজম-এর মাত্রা অনুযায়ী শিশুর জন্য বিশেষ ইন্টারভেনসন প্রোগ্রাম ডেভেলপ বা তৈরী করা হয়।

অটিজম (Autism) চিকিৎসায় কি ধরনের ইন্টারভেনসন প্রয়োজনহয়? (Interventions for Autism treatment)

একটি অটিস্টিক (Autistic) শিশুজন্য বিভিন্ন রকম পরিচর্যার প্রয়োজন।‘সেন্সরি ইন্ট্রিগেসন’ এর মাঝে অন্যতম। ‘সেন্সরি ইন্ট্রিগেসন’ পাওয়ার জন্য এই বিষয়ে দক্ষ একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্টের সহযোগতিা নিতে হবে। শিশুর যদি কথা বলতে সমস্যা থাকে তবে অটিজম বিষয়ে দক্ষ একজন “স্পিচ-থেরাপিস্টের” কাছে তাকে নিয়ে যেতে হবে।

  • শিশুর শরীরে অনেক সময় ফ্রি-রেডিকেল, টক্সিক মেটালের (লেড, মার্কারি ইত্যাদি) পরিমান অনেক বেড়ে যায়। ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ ধরনের শিশুর ক্ষেত্রে বায়ো-মেডিক্যাল চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। অনেক অটিস্টিক শিশুর জন্য সাইকোথেরাপি, বিহেভিয়ার মডিফিকেসন ইত্যাদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

  • এধরনের অটিস্টিক (Autistic) শিশুর জন্য বিশেষ ধরনের স্কুলের প্রয়োজন হয়। তবে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য দেশে মানসম্পন্ন বিশেষ স্কুলের সংখ্যা তেমন নেই। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইপনা ও গুটি কয়েক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অটিজম নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছে।

—————————————–

আরো পড়ুন-

——————————————

Dr. Hasan Ebna Amin 



Leave a Comment