ওজন কমানোর উপায়, দ্রুত ওজন কমানোর পরে, বেশিরভাগ মানুষ এটি কন্টিনিউ করতে পারে না। স্থায়ীভাবে ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা। এবং প্রথম ধাপ হল স্বাস্থ্যকর এবং উপযুক্ত খাবার চিহ্নিত করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।
সবাই একই ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করেন না। নিজের অপছন্দনীয় ডায়েট প্ল্যান ও খাবার খেয়ে ঠিকই দ্রুত ওজন কমানো যায়, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই কম ওজন ধরে রাখা অসম্ভব। কারণ ভাল না লাগার কারণে এই খাদ্যাভ্যাস কন্টিনিউ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা, বড়ং হঠাৎ নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ছেড়ে দিলে দুত ওজন আবার বেড়ে যায়। এই কারণেই আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে আমরা আপনাকে আপনার উপযোগী ও পছন্দনীয় স্বাস্থ্যকর খাবার খুঁজে পেতে সাহায্য করব যা আপনার জন্য মেইনটেইন করা বা ধরে রাখা সহজ হবে এবং এটি আপনার দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে শক্তিশালী করবে।
সূচিপত্র
প্রথম সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে যে অভ্যাস গুলো শুরু করবেন
- ১. পরবর্তী ১২ সপ্তাহে আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করতে প্রতি সপ্তাহের শুরুতে আপনার ওজন এবং কোমরের পরিধি রেকর্ড করে রাখুন। ক্রমাগত সাপ্তাহিক পরিবর্তন আপনাকে পরবর্তী সপ্তাহগুলিতে এজন কমানোর উপায় গুলো ধরে রাখতে অনুপ্রাণিত করবে।
- ২. খাবার গ্রহনের সময় ছোট আকারের প্লেট এবং বাটি ব্যবহার করুন। এতে অতিরিক্ত খাওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে, তাই সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে পারকবন। এছাড়াও পরিমিত খাবার গ্রহন করতে থাকলে কয়েকদিন পরই আপনি আপনার খাবারে সন্তুষ্ট বোধ করবেন এবং খুব বেশি খেতে অস্বস্তি লাগবে।
- ৩. প্রতিবার খাবার আগে 500 মিলিলিটার বা দুই গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার পেট ভরাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে এই সহজ অভ্যাসটি ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী।
- ৪. লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। প্রথম সপ্তাহের এই অভ্যাসটি পরবর্তী সপ্তাহে আপনাকে যে ব্যয়ামের চার্ট দেয়া হবে তার জন্য আপনাকে প্রস্তুত করে তুলবে।
ওজন কমাতে সকালের নাস্তা
এখানে সকালের নাস্তার কিছু ধরন দেয়া রয়েছে। আপনি যা খুশি খেতে পারেন। যাইহোক, সকালের নাস্তায় আপনি যে পরিমাণ ক্যালোরি (কিলোক্যালরি) গ্রহণ করেন তা মহিলাদের জন্য ২৮০ এবং পুরুষদের জন্য ৩৮০ এর বেশি হওয়া উচিত নয়। নিচে ক্যালরির পরিমাপ সহ কিছু খাবার দেওয়া হল যা আপনি সকালের নাস্তায় খেতে পারেন-
খাবার | ক্যালরির পরিমাণ |
১টি মাঝারি সাইজের কলা | প্রায় ৮০ কিলোক্যালরি |
১টি সেদ্ধ ডিম | প্রায় ৮০ কিলোক্যালরি |
১টি বড় সাইজের খেজুর | প্রায় ৭০ কিলোক্যালরি |
আধা কাপ দুধ | প্রায় ৮০ কিলোক্যালরি |
তেল ছাড়া আটার বা সম্ভব হলে লাল আটার রুটি (৬ ইঞ্চি আকারের) | প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি |
১টি বড় মাল্টা | প্রায় ৮০ কিলোক্যালরি |
১টি মাঝারি সাইজের আপেল | প্রায় ১০০ কিলোক্যালরি |
৫০ গ্রাম এর ১ স্লাইস আটার তৈরি বা হোলগ্রেইন পাউরুটি | প্রায় ১০০ কিলোক্যালরি |
আধা কাপ শুকনো ওটস | ১৫০ কিলোক্যালরি |
চা চামুচের এক চা চামচ তেল দিয়ে রান্না করা আধা কাপ মিক্সড সবজি | প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি |
কিলোক্যালোরিকে সাধারণত ক্যালরি বলা হয়। যেমন ১টি সেদ্ধ ডিম প্রায় ৮০ ক্যালরি অথবা ৮০ কিলোক্যালরি। সঠিক পরিমাপ কিলোক্যালরি। ক্যালরি ব্যবহারিক শব্দ বলা যেতে পারে।
এ খাবারগুলো যেভাবে খাওয়া যেতে পারে—
- কলা, দুধ দিয়ে রান্না করা ১/২ কাপ ওটস, সাথে ১ টি কলা।
- রুটি সাথে সবজি, ডিম। পাশাপাশি ১ টি আপেল।
- দুধ, ডিম, মালটা অথবা দুধের সাথে ১/৪ কাপ ওটস, খেজুর ইত্যাদি।
যেভাবে তালিকা দয়ো হয়েছে সেভাবেই যে খেতে হবেই, তা আসলে নয়। আপনি নিজের পছন্দমত খাবার বিভিন্ন ভাবে খেতে পারেন। তবে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে কোনো ভাবেই যেন অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন না করেন। মোট প্রয়োজনীয় ক্যালরির বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে ওজন বেড়ে যাবে।
১২ সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায়: ১ম সপ্তাহ – দুপুরের খাবারের তালিকা
দুপুরের খাবার বা মধ্যাহ্নভোজ খাওয়ার সময় মনে মনে খাবারের প্লেটকে ০৪টি সমান ভাগে ভাগ করে ফেলুন। এবার প্লেটটির চারভাগের দুইভাগ বা অর্ধেকে নিবেন শাকসবজি ও ফলমূল। বাকি ০২ ভাগের ০১ ভাগে রাখার চেষ্টা করবেন শস্যদানা যেমন- ভাত, বা শ্বেতসারজাতীয় খাবার, শেষ ভাগে রাখার চেষ্টা করবেন প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার।
এখানে বেশ কয়েক ধরনের ধরণের খাবারের কথা উল্লেখ করা হল। এখান থেকে আপনার পছন্দমত খাবার আইটেম বেছে নিতে পারেন। সপ্তাহের একেকদিন একেক রকম খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। তাহলে খাবারে ভিন্নতা আসবে, অরুচি হবে না এবং ওজন কমানোর উপায় গুলো মেনে চলতে সমস্যা হবে না। শুধ আইটেম ঠিক করার সময় খেয়াল রাখবেন, যা খেতে চাচ্ছেন তার মোট ক্যালরি কাউন্ট যেন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে ৪৮০ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫৭০ এর বেশি কোন ভাবেই না হয়।
শাকসবজি
শাকসবজিতে এনার্জি বা ক্যালরির পরিমাণ খুবই অল্প, তাই শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যাবে এবং খাওয়া উচিৎ। শাকসবজিতে ফাইবার বা আঁশ থাকে, তাই পেট দ্রুত ভরে উঠবে, ক্ষুদা কমে আসবে এবং অনেকক্ষণ কিছু না খেলেও ক্ষুধার অনুভব হবে না। শাকসবজি খাওয়ার আরেকটি সুবিধা হল, আপনি এগুলোর মাঝে কিছু কাঁচা কিংবা সেদ্ধ করে অথবা ভাজি কিংবা মাছ মাংশের সাথে তরকারি – যেকোনোভাবে খেতে পারেন। চেষ্টা করবেন খাবার তালিকায় বিভিন্ন ধরনের, টাটকা, মৌসুমি শাকসবজি রাখতে। এতে খাবারের খরচ কম পড়বে, আবার শরীর প্রয়োজন অনুযায়ী নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন অনুপাতে সহজেই পেয়ে যাবেন।
তবে রান্না করার সময় অবশ্যই পরিান মত তেল ব্যবহার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। মাত্র ০১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েলে প্রায় ১২০ ক্যালরি থাকে, যা প্রায় ০২টি মাল্টা অথবা প্রায় আধাকেজি বরবটিতে থাকা ক্যালরির চেয়ে বেশি। তাই শাকসবজি রান্না করার সময় তেল-লবণ ইত্যাদি খাদ্য উপাদান যতটুকু পারেন পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করবেন। বিভিন্ন রঙের শাকসবজি খাবার চেষ্টা করবেন। কারণ বিভিন্ন রং-এর শাকসবজিতে বিভিন্ন ভিটামিন বিভিন্ন অনুপাতে থাকে। তাই সুষম পুষ্টির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মাথায় রাখতে হবে যে, গোলআলু সবজির মধ্যে ধরা ঠিক হবে না। এর সাথে সাথে কাঁচকলা, মাটির নিচের মিষ্টি আলু, কাসাভা ইত্যাদিও শাকসবজির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এগুলোকে ভাত কিংবা রুটির মত শ্বেতসার বা স্টার্চ জাতীয় খাবারের মধ্যে ধরতে হবে।
ওজন কমানোর উপায় – দুপুরে ভাত, রুটি ও অন্যান্য স্টার্চ বা শ্বেতসারজাতীয় খাবার
অনেকেই মনে করেন যে, ওজন কমাতে হলে ভাত বা রুটি খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে; বস্তুত এই ধারণাটি ভুল। ওজন কমানোর উপায় হিসেবে পরিমিত পরিমাণে যদি পুষ্টিকর ও কম ক্যালরির স্টার্চ বা শ্বেতসার বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যায়, তাহলে সেগুলো পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে; ক্ষুদা কমাতে এবং সর্বপরি ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
ওজন কমাতে সাদা চালের ভাত ও ময়দার রুটির বদলে বেছে নিতে পারেন লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি। লাল চাল ও লাল আটতে সাধারণ চাল বা আটার তুলনায় পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ অনেক বেশি এবং এগুলোতে অনেক আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা পেট ভরা রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
এখন থেকেই যদি আপনি খাদ্যাভ্যাসে একটা পরিবর্তন আনতেপারেন। মেশিনে ভাঙ্গানো অথবা রিফাইন্ড গ্রেইনের পরিবর্তে হোলগ্রেইন বেশী খাবার চেষ্টা করবেন। নিচের ৩টি পরামর্শ মেনে চলতে পারেন-
- ধীরে ধীরে শুরু করুন। প্রথমে নতুন কিছু খেলে ভাল ভালো না লাগতেই পারে। তাই হুট করে না বদলে প্রথম সপ্তাহে একটা বা কিছু কিছু আটেম কছিু কিছু পরিমানে বদলান। সাদা চালের ভাতের সাথে কিছু লাল চালের ভাত মিশিয়ে খেতে পারেন। রুটি খেলে একটা লার আটার রুটি, তার সাথে একটা সাদা আটার রুটি প্রথম দিকে রাখতে পারেন।
- ভাত অথবা রুটি ছাড়াও অন্যান্য হোলগ্রেইন আইটেম খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। যেমন, পাস্তা খেতে মন চাইলে প্যাকেটে অবশ্যই হোলগ্রেইন লেখা দেখে পাস্তা রান্না করতে পারেন।
- লাল আটা অথবা লাল চাল খেলেও পরিমাণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এগুলোও বেশী খাওয়া যাবে না। সুষম খাবারের অংশ হিসেবে আপনি লাল চাল আর লাল আটা খাদ্য তালিকায় রাখবেন।
অবশ্যই দুপরের খাবারে প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার রাখতে হবে
পরিমিত প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার লম্বা সময় ধরে ক্ষুধা তৈরী হতে দেয়না। প্রোটিন জাতীয় খাবার নির্বাচন করার সময় কম চর্বিযুক্ত খাবারগুলো বেছে নিবেন। প্লেটের চারভাগের একভাগ ভরবেন এসব খাবার দিয়ে। এরকম কিছু খাবার হলো—
- মটরশুঁটি, শিম ও অন্যান্য বীনস।
- বিভিন্ন ধরনের ডাল, যেমন: মসুর, মুগ, মটর, ছোলা বা মাষকলাই, চিয়া সিড ইত্যাদি।
- বিভিন্ন রকম মাছ।
- চর্বিছাড়া মাংস। লাল মাংস এভয়েড করা উত্তম।
- মুরগির মাংস।
- কম ফ্যাটের দুধ, দই, পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার।
- ডিম বা ডিমের তৈরী আইটেম।
- টোফু ইত্যাদি।
১২ সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায়: ১ম সপ্তাহ – রাতের খাবারের তালিকা
রাতের খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুপুরের আইটেম গুলোই খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। ক্যালরির পরিমাণটা ঠিক দুপুরের খাবারের মতই রাখবেন। তবে দুপুরে এনিম্যাল ফ্যাট অথবা প্রাণিজ প্রোটিন খেলে রাতের খাবারে চেষ্টা করবেন উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেতে। এতে দৈনন্দিন চাহিদা অনুযায়ী শরীরে নানান ধরনের পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারবেন। যদি সবজি কম খেতে ইচ্ছে করে অথবা কিছু পরিমানে মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে তবে নিজে কন্ট্রোল করবেন এবং ওজন কমানোর উপায় হিসেবে একটি ফল খেয়ে নিতে পারেন।
দুই বেলা স্ন্যাকস বা হালকা নাস্তা
তিন বেলা খাবারের মাঝের বিরতিতে বা ব্যায়াম করার পরে ক্ষুধা লাগতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমেই আধা লিটার বা ০২ গ্লাস পানি খেয়ে নেওয়া উচিৎ। এরপর হালকা নাস্তা খেতে হবে। নাস্তার মধ্যে বেছে নিতে হবে পরিমিত পুষ্টিকর খাবার। ক্ষুধা লাগলেই যে যা সামনে থাকবে তাই খেতে হবে এসব অভ্যাস থেকে সরে আসতে হবে। হাতের নাগালে থাকা ভাজা-পোড়া বা বিস্কুট-চানাচুরের মত প্রসেসড ফুড খেলে ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়বে। এসব খাবারে যেমন প্রচুর ফ্যাট, চিনি ও ক্যালরি থাকে, তেমনি এসব খাবারের পুষ্টিগুণ অনেক কম। তাই স্ন্যাক্স বা নাস্তার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নির্বাচন করবেন।
- নাস্তার হিসেবে গাজর, মূলা, টমেটো আর শসা খেতে পারেন। লম্বা করে কেটে রাখা মূলা বা গাজর কাঁচের বোতলে ভরে সামান্য পানিসহ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন পরবর্তীতে খাবার জন্য। শসাও এভাবে কেটে ফ্রিজে রাখতে পারেন। তবে এগুলো খাওয়ার সময় কখনই সাথে লবণ মিশিয়ে খাওয়া অভ্যাস করা যাবে না।
- এছাড়াো টক দই বা অল্প পরিমানে মুড়ি অথবা একটা সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন।
- বাদাম খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন বাদামে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকলেও ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি। তাই বাদাম পেট ভরে খাওয়া যাবে না। দিনে ০৫টার বেশি বাদাম না খাওয়াই উত্তম। বাদামের মধ্যে কাঠবাদাম বা আলমন্ড, চিনাবাদাম, কাজু বাদাম অথবা ওয়ালনাট খেতে পারেন।
এভাবে দিনে দুই বেলা নাস্তা গ্রহন করবেন। নাস্তা গ্রহনের ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখবেন ক্যালরি কাউন্ট যতে প্রতি নাস্তায় ১০০-১২০ ক্যালরির বেশি না হয়।
প্রথম সপ্তাহের খাবারে আমরা ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহনের ব্যপারে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আঁশযুক্ত খাবার কেন গুরুত্বপূর্ণ তা নিচে দেখে নিন।
ওজন কমানোর উপায় – ওজন কমাতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে প্রথম সপ্তাহ থেকেই
- অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত ফ্যাট খাবার যেমন- অলিভ অয়েল, অন্যান্য তেল, ঘি কিংবা বাটার অত্যন্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ। সুতরাং ভাজা-পোড়া, চিপস্, কেক কিংবা পেস্ট্রি, তৈলাক্ত পরোটা, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদিকে আমরা অতিরিক্ত ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ধরে থাকি। তবে বাসায় রান্না করার সময়ও যদি তরকারি বা শাকসবজিতে তেলের পরিমাণ অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেসকল স্বাস্থ্যকর খাবারও ফ্যাট তথা চর্বি ও ক্যালরি সমৃদ্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে পরিবারের সবাইকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
- নাস্তায় চেষ্টা করবেন জেলি, চিনিযুক্ত ব্রেকফাস্ট, কর্ণ ফ্লেক্স, ফ্রুট লুপস, চকোজ ইত্যাদি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে।
- প্রসেসড ফুড বা রেস্টুরেন্টের খাবারগুলোর ক্ষেত্রে সুস্বাদু করার জন্য প্রচুর ফ্যাট, লবণ ও চিনি ব্যবহার করা হয়। ওজন কমানোর উপায় মানতে চাইলে এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
- ব্যাভারেজ আইটেম বা লিকুইড ক্যালরি থেকে অবশ্যই সাবধান থাকবেন। চিনি যুক্ত জুস, কোক কিংবা অন্যান্য কোমল পানীয়, বিভিন্ন ধরনের স্মুদি, মিষ্টি কোল্ড কফি, চিনি যুক্ত মিল্কশেক ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই পুরো একবেলার খাবারের সমান বা তার চেয়ে বেশি ক্যালরি থাকতে পারে এক গ্লাস মিল্কশেকে, যা আপনার পরিশ্রমকে ক্ষণিকেই পন্ড করে দিতে পারে। তাই ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই এগুলো পরিহার করতে হবে।
- অনেকের ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিনি মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস অবশ্যই বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।।
এই সপ্তাহের কাজগুলোর মাধ্যমে আপনি ওজন কমানোর প্রাথমিক পর্যায় শুরু করতে পারবেন। ১২ সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায়-এর ২য় সপ্তাহে আমাদের টার্গেট আরো বৃদ্ধি পাবে। এই প্ল্যানের সাথে থাকলে ধীরে ধীরে ৩ মাসের মাঝে আপনি অবশ্যই কাঙ্খিত ফল পাবেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবারের উপকার
খাবার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার খেলে পেট অনেকক্ষণ ধরে ভরা ভরা অনুভূত হয় এবং ক্ষুদা কম লাগে। এভাবে খাবার তথা ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা দৈনিক ক্যালরি সীমার মাছেই সীমিত রাখা যায়। ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার পেটকে অনেক ভালো রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহযোগীতা করে আর রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আমাদের প্রত্যেকের দৈনিক কমপক্ষে ৩০গ্রাম করে ফাইবার খাওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই প্রতিদিন এর চেয়ে অনেক কম পরিমানে ফাইবার খায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য বিষয়ে ভাল থাকুন ডট কমের পরামর্শ-
কেন ওজন বেশি দ্রুত কমাবেন না?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এক জন মানুষের নতুন কোনো অভ্যাস তৈরি করতে গড়ে ১০ – ১২ সপ্তাহ সময় লাগে। ভাল থাকুুন ডট কমের এই গাইডটি প্রতিদিনের ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে আপনার ওজন কমাতে এবং কমিয়ে ফেলা ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করবে। আপনি সপ্তাহে ০.৫ কেজি থেকে ১ কেজি (১ থেকে ২ পাউন্ড) করে ওজন কমাতে পারবেন। এই হারে ওজন কমানো সবচেয়ে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
খুব কম সময়ের মাঝে দ্রুত ওজন কমাতে চেষ্টা করলে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদানের অভাব, পিত্তথলিতে পাথর হওয়া সহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
রেফারেন্সেস-