Happiness বা সুখি হওয়া
আপনার আশেপাশের কিছু লোক সবসময় হাসি ঠাট্টা এবং মজা করে। তাদের যেন Happiness বা সুখি হওয়া ‘র সমস্ত রাস্তা জানা আছে। সবসময় আনন্দের মাঝে থাকতে তারা পছন্দ করে। আপনি যদি তার সাথে নিজেকে তুলনা করেন এবং ভাবেন যে আপনি তার মত সুখি থাকতে পারবেন না তবে তা ভুল। Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য আপনার প্রয়োজন প্রচন্ড মানসিক শক্তি আর নিচের টিপস গুলো ফলো করা। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, আপনার কাছে রয়েছে নিজের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার পূর্ণ ক্ষমতা। এবং এর মাঝেই রয়েছে Happiness বা সুখি হওয়া প্রকৃত রহস্য।
ভালো থাকুন ডট কম – www.valothakun.com – এর আজকের লিখা Happiness বা সুখি হওয়া নিয়ে
Happiness বা সুখি হওয়ার জন্য আধুনিক বিজ্ঞান কি বলে?
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
আপনার হার্ট বা হৃদপিন্ডের রক্ত পাম্পিং আপনার পুরো শরীর জুড়ে এন্ডোরফিনস নামের ক্যামিকলে তৈরী করে। এগুলো মনকে ড্রিপ্রেশনে যেতে দেয়না। খারাপ মেজাজকে দমন করতে সহায়তা করে। হতাশার লক্ষণ গুলো নিয়মিত ব্যায়ম করার ফলে কমে যায়। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন ব্যায়াম করার পর শরির ক্লান্ত হলেও মনটা অনেক ফুরফুরে হয়। একটা অনন্দের অনুভুতি তৈরী হয়। যেকোনো শারীরিক ব্যায়াম যেমন- হাটাহাটি, দৌড় বা জগিং, ইনডোর সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম, নাচ ইত্যাদি করে আপনি সারাদিন অনেক প্রফুল্ল থাকতে পারবেন। এমনকি দিনে দ্রুত ২০ – ৩০ মিনিটের হাঁটা বা সময় না পেলে অফিসে যাওয়া আসার সময় ২০- ৩০ মিনিট হাটা আপনার শরীরিক উপকারের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও দিবে।
সবুজ শাক-সবজি খান
সবুজ শাক-সবজি ফোলেট সমৃদ্ধ, যা আমাদের রিকমেন্ডটে দৈনিক রিকোয়ারমেন্ট (আরডিএ) ৩৩% সরবরাহ করে। এই খাবারগুলো নেতিবাচক মেজাজ এবং হতাশার হ্রাসে করে এমন একটি ক্যামিকাল “ডোপামিন” মস্তিষ্কে তৈরি করতে সহায়তা করে। ২০১২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি যারা সবচেয়ে বেশি ফোলেট গ্রহণ করেন তারা কম পরিমানে খাওয়া লোকদের তুলনায় কম হতাশা গ্রস্থ থাকেন।
আপনারা পড়ছেন ভালো থাকুন ডট কম – www.valothakun.com – এর আজকের লিখা Happiness বা সুখি হওয়া
নিজের বা ঘরের জন্য ফুল কিনুন
হার্ভার্ড গবেষকদের একটি দল প্রমাণ করেছেন যে বাড়িতে সতেজ ফুল রেখে সহজেই উদ্বেগ এবং নেতিবাচক মেজাজকে দূরে রাখা যায়। গবেষণাযয় দেখা যায় যারা বড়িতে ফ্র্রেশ ফুল রেখেছিলেন তারা বিভিন্ন মানবিক গুনাবলিও বেশি প্রকাশ করেছেন যেমন- অন্যের প্রতি আরও সমবেদনা বোধ, নিজের কাজে শক্তি এবং উৎসাহবোধ অনুভব করা ইত্যাদি। তাই একটু খরচ করুন নিজের মানসিক প্রশান্তির এবং Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য।
Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য মন খুলে হাসুন
হাসি সামজিক একটা অভিব্যক্তি হলেও কিছু গবেষক মনে করেন যে হাসিও মনকে প্রশান্তি দেয়। হাসি সহজ একটা কাজ। এমনকি জোর করে হসলেও আপনার মস্তিষ্কের ভাল লাগার সেন্টারকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং আপনার মেজাজ ভাল করতে সাহায্য করে।
ঘুরতে যান
মন খারাপ লাগছে? বাইরে কিছুটা হেটে আসুন। রোদে হলেও সমস্যা নেই। বরং মানবদেহ সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি তৈরি করে এবং গবেষণায় দেখা যায় যে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি মানুষকে হতাশাগ্রস্থ, উদ্বিগ্ন এবং ক্লান্ত করে। আপনার মেজাজ স্বাভাবিকভাবে হালকা করার জন্য 20 থেকে 25 মিনিটের রৌদ্রের রোদে হটতে পারেন। তাছাড়া ব্যস্ত জীবনে মাঝে মাঝে সম্ভব হলে সপ্তাহে একদিন হলেও পরিবারের সবাইকে বা বন্ধুদের নিয়ে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসুন। এমনকি রেস্তরা হলেও সমস্যা নেই।Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য এই ছোট্ট বিনোদন খুবিই হেল্পফুল।
ইয়োগা বা যোগ ব্যায়াম
আমাদের দেশে খুব বেশি একটা প্রচলন না থাকলেও অনেকেই এখন ইয়োগা বা যোগ ব্যায়ামের বিষয়ে উৎসাহি হয়ে উঠছেন। ইয়োগা মানুষের শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাসনসিক সুস্থতা নিশ্চিতে সাহায্য করে।
মেডিটেশন Happiness বা সুখি হওয়া ‘র আরেকটি মাধ্যম
মেডিটেশন একটি প্রমাণিত স্ট্রেস কমানোর উপায় যার কোনো ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। গবেষণায় দেখা গেছে যে এর উপকারিতা অনেক যেমন, প্রশান্তি দেয়া, ব্যথা হ্রাস, ব্লাড প্রেশার কমানো, কাজের উৎসাহ বাড়ানো ইত্যাদি। মজার ব্যপার হল মস্তিস্কে “হ্যাপি” রাসায়নিক বা সুখের রাসায়নিকগুলি — “সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিনস” মেডিটেশনের মাধমে রিলিজ হয় এবং তাই মেডিটেশন মেজাজ ঠিক রেখে সুখি হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপায়। স্ট্রেস কমাতে আজ থেকেই মেডিটেশন শুরু করতে পারেন।
ভালো থাকুন ডট কম – www.valothakun.com – এর আজকের লিখা Happiness বা সুখি হওয়া ; ভালো থাকুন ডট কম – www.valothakun.com – এর আজকের লিখা
লেবু বা কমলার গন্ধ:
সিট্রাস সুগন্ধি, যেমন কমলা, লেবু, এবং আঙ্গুর আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া আনার পাশাপাশি চাপ কমাতে কাজ করে। ইতিবাচক প্রভাব বাড়ানোর জন্য আপনি জুঁইয়ের মতো ফুলের সুগন্ধও ব্যবহার করতে পারেন।
দুপুরে কার্বস খান
আপনি জানেন যে দুপুরের মেজাজ অনেক সময় ঠিক থাকেনা। বিশেষ করে আমরা যারা দুপুর সময়টা অফিসে থাকি এবং স্কুল কলেজে থাকি। মন এবং শরীর দুটোই অবসাদে ভরে উঠে। এসময়টা অনেই দুপুরের খাবার খান না বা খেতে সময় পান না। যা ঠিক নয়। খেয়াল রাখবেন এই খাবারে যাতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমান বেশি থাকে। অনেক দিন ধরেই আমরা শুনে আসছি যে আমাদের কার্বস এড়ানো উচিত, তবে বাস্তবে, একটি কম কার্ব ডায়েট আমাদের দুঃখ এবং স্ট্রেস অনুভব বাড়াতে পারে। কার্বোহাইড্রেট আসলে সরাসরি মস্তিস্কে কাজ করে মেজাজ চাংগা করে দেয়। Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য নিজ কর্মক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি পুষ্টির দিকেও নজর দিন।
কাজের মাঝে ছোট ছোট ব্রেক দিন
অনেকেই একটানা কাজ করেন। কিন্তু বাস্তবতা হল এটি আপনার মনকে আরো বিষাদগ্রস্থ করে তোলে। কাজের কোয়ালিটিও খারাপ হতে পারে। তাই ঘন্টা খানেক পর পর ৩-৪ মিনিটের ব্র্যাক দিন। সহকর্মীদের সাথে টুকটাক আলাপ করুন। ইউ টিউবে মজার ভিডিও দেখতে পারেন।
Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য আপনার শখের কাজটি করুন
যান্ত্রকি জীবনে মানুষের শখের কাজটি করার সময়ই পাওয়া যায়না। শখের কাজ “মাই হবি” ইংরেজি প্যারাগ্রাফেই এখন সীমাবদ্ধ। কিন্তু মনকে চাঙ্গা রাখতে মনোবিকাশের শখ যেমন বই পড়া, বাগান করা, পোশা প্রণী পালা ইত্যাদি অনেক কার্যকরী। শহুরে জীবনের বারান্দার টবের ছোট একটা গাছও সারাদিনের প্রশান্তিকে বিলীন করে মনকে প্রফুল্ল করতে পারে।
আপনার খাবারে হলুদ এবং আদা বাড়িয়ে দিন
হলুদে আছে “কারকুমিন” যার প্রাকৃতিক প্রতিষেধক গুণ রয়েছে। এর রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থারাইটিস, অ্যালঝাইমার ডিজিজ এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন গবেষনায়। এছাড়া কার্কিউমিন মস্তিস্কে “সেরোটোনিন এবং ডোপামিন” বৃদ্ধির করে যা আপনার মনকে ভাল রাখতে সহায়তা করে।
নিয়মিত গান শোনা ও নিজে গাওয়া
প্রত্যেকের স্মৃতিতেই অনেক গান আছে যা শুনলে আজো ভাল লাগে। মানুষ নস্টালজিক হয়ে যায়। সম্ভব হলে আপনার প্রিয় গানগুলো মোবাইলে সংগ্রহ করুন। মাঝে মাঝে শুনুন। বিশেষ হরে অবসাদের বা হতাশার সময় গান অনেক বড় টনিক হিসেবে কাজ করে।
প্রয়োজনে নিজও গুনগুন করতে পারেন। সুরের অতো ধার ধারবেন না। দেখবেন অল্প সময়েই মন ভাল হয়ে যাচ্ছে। গান না পারলেও Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য তথাকথিত বাথরুম সিঙ্গার হতে দোষের কিছু নেই।
চা-কফি বা গ্রিন টি পান করতে পারেন
সকালের এই এনার্জি বুস্টটি মুড পিক-মি-আপ হিসাবে দ্বিগুণ কাজ করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে মহিলারা নিয়মিত দিনে কমপক্ষে দুই কাপ কফি পান করেন তাদের অন্য নারীদের তুলনায় হতাশার ঝুঁকি ১৫% কম। তবে খেয়াল রাখবেন চা বা কফিতে চিনি যাতে না খান। তবে হালকা দুধ মেশাতে পারেন। অনেকে গ্রিন টি পছন্দ করেন। আসলেই গ্রিন টি’র পলিফেনল ক্যামিকেলগুলো ওজন কমায় এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিছু ক্যান্সার ও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
Happiness বা সুখি হওয়া ‘র বড় মাধ্যম হল নিজ কমিউনিটি মেইনটেন করা
স্মার্ট ফোনের যুগে যোগাযোগ অনেক সহজ হলেও সামনাসামনি দেখা হাওয়াটা বেশি জরুরী। তাই আপনার স্মার্টফোনটি নীচে রাখুন এবং আপনার কম্পিউটারের স্ক্রীন থেকে একধাপ পিছনে যান। মন খারাপ হলে বা হতাশ হলে পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন বা আড্ডা দিন। চ্যাপেল হিলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা থেকে প্রাপ্ত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মানব স্পর্শ সেরোটোনিনের মতো ভাল অনুভূতিযুক্ত রাসায়নিকগুলি রিলিজ করে, পাশাপাশি রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন হ্রাস করে যা আপনাকে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ কর সহায়তা করে।
সবশেষে বলব নিজের মনকে শক্ত রাখুন। ভাল থাকাটা সর্ম্পূণ আপেক্ষিক বিষয়। কঠিন সমস্যা গুলো সহজ ভাবে চিন্তা করলে অনেক সহজ মনে হয়। সবাইকে নিয়ে হাসি-খুশি থাকুন। সুন্দরভাবে জীবনকে উপভোগ করুন। Happiness বা সুখি হওয়া ‘র জন্য ছোট ছোট এই বিষয়গুলো আপনাকে কিছুটা হলেও উৎসাহ যোগাবে বলে আশা করছি।
———————————–
ডা. হাসান ইবনে আমিন
আরো পড়ুন-
শীতে ত্বকের সুরক্ষায় করনীয়
মাথাব্যথা: কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা – Causes, Symptoms and Treatment of Headache