ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ: জানুন এবং সতর্ক থাকুন আজি।

Hasan Ebna Amin

Updated on:

ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ জানুন এবং সতর্ক থাকুন আজি।

ডায়াবেটিস হলো এমন একটি রোগ যেখানে শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিসের মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর বেশি হলে বিপদ।

ডায়াবেটিস, যা সাধারণত ‘বহুমুত্ররো’ বা ‘মধুমেহ’ নামে পরিচিত, একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা রক্তের শর্করাকে কোষে প্রবেশ করিয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা ইনসুলিন ব্যবহারে অক্ষম হয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস প্রাথমিক অবস্থায় নিয়ন্ত্রণে না রাখা হলে কিডনি, হৃদযন্ত্র ও চোখের সমস্যা সহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সঠিক জীবনযাপন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ: জানুন সবিস্তার তথ্য

ডায়াবেটিসের পরিচয়

ডায়াবেটিস একটি পরিচিত রোগ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে হয়। ডায়াবেটিস থাকলে শরীর ইনসুলিন তৈরী করতে পারেনা অথবা ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস কি

ডায়াবেটিস হলো এমন একটি রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। এটি দুই ধরনের হয়। টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

  • টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এটি সাধারণত শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়।
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলার ডায়াবেটিস হতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার পরে চলে যায়।
  • আদারস টাইপ: যেমন- অগ্নাসয়ের সমস্যার কারণে ডায়াবেটিস, অন্যান্য হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিস একটি কমন রোগ কিন্তু ঠিক ভাবে চিকিৎসা না করা হলে শরীরে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি  করতে পারে। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো প্রথম পর্যায়ে তেমন প্রকট না হলেও সময়ের সাথে গুরুতর হতে পারে। এই লক্ষণগুলো দ্রুত চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেন চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।

প্রাথমিক লক্ষণ

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক ক্ষেত্রেই তেমন বুঝা যায় না। তবুও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা প্রথম থেকেই নজরে আসতে পারে।

  • প্রচুর প্রস্রাব হওয়া
  • অতিরিক্ত পিপাসা লাগা
  • অস্বাভাবিক ভাবে ক্ষুধা লাগা
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করা
  • ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।

গুরুতর লক্ষণ

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা না হলে গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

লক্ষণ বিবরণ
দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ক্ষত ক্ষত সহজে সারে না
হাত – পায়ের সমস্যা পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনুভূতি কমে যায়, ঝিমঝিম অনুভব হতে পারে।
কিডনির জটিলতা কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি ক্রমান্বয়ে কার্যক্ষমতা হারাতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। ডায়াবেটিস হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বিপদ হতে পারে।

রক্তে শর্করার মাত্রা

রক্তে গ্লুকোজের বা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে।

১. ফাস্টিং ব্লাড সুগার (মিলিমোল/লিটার)

  • স্বাভাবিক: ৩.৯–৫.৫ মিলিমোল/লিটার
  • প্রিডায়াবেটিক: ৫.৬–৬.৯ মিলিমোল/লিটার
  • ডায়াবেটিক: ≥৭.০ মিলিমোল/লিটার (দুইটি আলাদা পরীক্ষায়)

২. পোস্টপ্রান্ডিয়াল (খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর) ব্লাড সুগার (মিলিমোল/লিটার)

  • স্বাভাবিক: ৭.৮ মিলিমোল/লিটার এর কম
  • প্রিডায়াবেটিক: ৭.৮–১১.০ মিলিমোল/লিটার
  • ডায়াবেটিক: ≥১১.১ মিলিমোল/লিটার

৩. HbA1c (শতাংশ)

    • স্বাভাবিক: < ৫.৭%
    • প্রিডায়াবেটিক: ৫.৭%–৬.৪%
    • ডায়াবেটিক: ≥৬.৫%

এগুলো রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা। এর চেয়ে বেশি হলে বিপদ হতে পারে।

সূত্র: আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য খাদ্যাভ্যাস, লাইফস্টাইল মোডিফিকেশন, ব্যয়াম, ওষুধ ও প্রয়োজন হলে ইনসুলিন গ্রহন করতে হবে।

খাদ্যাভ্যাস

সঠিক খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করে। নিম্নলিখিত টিপস অনুসরণ করতে পারেন:

  • কম শর্করাযুক্ত খাবার খান।
  • প্রতিদিন ফল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান।
  • পরিমাণমতো প্রোটিন গ্রহণ করুন।
খাবারের ধরন উদাহরণ
শাকসবজি বাঁধাকপি, শিম, লাউ
ফল আপেল, কমলা, কাঁঠাল
প্রোটিন ডাল, মুরগি, মাছ

ওষুধ ও ইনসুলিন

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়।

  1. ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করুন।
  2. ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হতে পারে।
  3. নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করুন।

নিয়মিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। এভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

Frequently Asked Questions

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা বৃদ্ধি করে। এটি ইনসুলিনের অভাব বা কার্যকারিতার কারণে ঘটে।

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ?

ভরা পেট:
রক্তে শর্করা স্তর ৩.৯-৫.৫ মিলিমোল/লিটার এর মধ্যে থাকা উচিত। এর বেশি হলে, যেমন ৫.৬ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি, তা প্রিডায়াবেটিক অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে এবং এই পর্যায়ে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে ডায়াবেটিক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
খালি পেট:
যদি রক্তের শর্করা ৭.০ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি হয়, তবে এটি ডায়াবেটিস হতে পারে। এছাড়া, HbA1c যদি ৫.৭% এর বেশি হয়, তাহলে তা প্রিডায়াবেটিক বা ডায়াবেটিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়, যা সময়মতো চিকিৎসা না নিলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী কী?

ডায়াবেটিসের লক্ষণ: অতিরিক্ত তৃষ্ণা (পলিদিপসিয়া), প্রতি সময়ে প্রস্রাবের অনুভূতি (পলিউরিয়া), অতিরিক্ত ক্ষুধা (পলিফ্যাগিয়া), শক্তির অভাব বা ক্লান্তি, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা (Blurred vision), দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষত নিরাময়ের সমস্যা, পা বা হাতের শিরা/স্নায়ুর সমস্যা (নিউরোপ্যাথি), অকস্মাৎ ওজন কমে যাওয়া, নতুন ইনফেকশন হওয়া।

পরিশেষে,

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম অব্যাহত রাখুন। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে চলুন। ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন থাকলে বিপদের ঝুঁকি কমে যায়। সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে এসব বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন।

আরো পড়ুন-

Leave a Comment