চীনে এখন ‘হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস‘ (HMPV) দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। দেশটির হাসপাতালগুলোতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। চীনের এই পরিস্থিতি দেখে অনেকেরই কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ দিনগুলোর স্মৃতি আবার ফিরে আসছে, কারণ করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীন থেকেই হয়েছিল। তবে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, এই ভাইরাস খুব একটা বিপজ্জনক নয়। শীতকালে যে ধরনের ভাইরাস সাধারণত ছড়ায়, এটি তেমনি এক ধরনের ভাইরাস। তবুও, সামাজিক মাধ্যমে (Social Media) চীনের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড়ের ছবি দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বার্তা দেওয়া হলেও, বাংলাদেশিদের মনে প্রশ্ন উঠছে, “নতুন বছরে কি আবারও নতুন বিপদ আসছে? আবার কি চীনে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হতে চলেছে?”
‘হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস’ (এইচএমভপিভি) কি? এই ভাইরাস নিয়ে কি আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
এই প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান জানান, “এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস খুব ভয়াবহ এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এটি সাধারণ সর্দি-কাশি বা জ্বরের মতো একটি ভাইরাস মনে হচ্ছে। এই সময় সাধারণত এমন ধরনের ভাইরাস ছড়ায়, যেগুলো শীতকালীন সংক্রমণের মতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখনও এই ভাইরাস নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, প্রতি বছরই বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) এর কারণে নতুন ভাইরাস আমাদের কাছে চলে আসে। কিন্তু, এটি কতটা ক্ষতিকর হবে, সেটা বলা এখনও কঠিন।”
তবে, সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। কোভিডের প্রথম দিকে সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগার লক্ষণ গুলো সাধারণ মনে করে অনেকেই উপসর্গ উপেক্ষা করেছিলেন এবং পরে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। চিকিৎসকরা আবারও সেই ভুলগুলো না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। অদ্রিজা বলেন, “ঠান্ডা লাগা আসলে কোনো আলাদা সমস্যা নয়। এটা বেশিরভাগ সময় বিশেষ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে হয়। সুতরাং, জ্বর, সর্দি-কাশি বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক থাকা জরুরি। ঘরোয়া চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
ভাইরাসের উপসর্গগুলো জানলে, আগেভাগে সাবধান হওয়া সহজ হবে।
(হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) এইচএমপিভি ভাইরাসের উপসর্গ:
- সাধারণ ফ্লু-এর মতো সকল ধরনের লক্ষণ
- শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ
- জ্বর, সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ
- বড় সমস্যা হলে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের ঝুঁকি
কোন বয়সীদের বেশি ঝুঁকি?
চিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সেজন্য, বাড়ির বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ছোট বাচ্চা এবং যারা আগে থেকেই অসুস্থ, তাদের জন্য বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। ঠান্ডা লাগলেই তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভাইরাস জনিত রোগ থেকে বাঁচতে কী কী নিয়ম মানতে হবে?
- স্যানিটাইজার (Sanitizer) ব্যবহার করুন
- বাইরে থেকে ফিরে হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন
- সর্দি-কাশি আক্রান্তদের কাছ থেকে দূরে থাকুন
- বাইরে বের হলে মাস্ক পরুন
এই ধরনের সাধারন ভাইরাস থেকে বাঁচতে, নিয়মিত সতর্কতা অবলম্বন করলেই নিরাপদে থাকা সম্ভব।